যোগাযোগ রক্ষার জন্য ফেসবুক একটি সহজ ও জনপ্রিয় মাধ্যম। আমাদের পরিবার আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাই রয়েছে ফেসবুকে তাদের সবার সঙ্গে বাস্তবে লাইফে যোগাযোগ রাখা হয়তো প্রায় অসম্ভব কিন্তু ভার্চুয়াল জগতের মাধ্যমে তা সম্ভব। দিন দিন যে হারে ফেসবুক ইউজার বাড়ছে সেই হারে ফেসবুক একাউন্টের নিরাপত্তা বাড়ছেনা, এমনকি কেউ রিপোর্ট করার ফলেও শখের ফেসবুক একাউন্ট টি বন্ধ করিয়ে দিতে পারে। কিভাবে ফেসবুক আইডিটাকে নিরাপদ রাখবেন হ্যাকারদের হাত থেকে এবং কিভাবে রিপোর্ট থেকে বাচাবেন তা জানতে পোস্ট টি মনোযোগসহকারে পড়ুন।


ফেসবুক আইডি নিরাপদ রাখার জন্য নিচের প্রধান ৫ টি স্টেপ ফলো করুন।

 ১। টু ফ্যাক্টর ভেরিফিকেশন চালু করুনঃ
ফেসবুক আইডি নিরাপদ রাখার জন্য সবচেয়ে বেশী কার্যকরী টিপসই হলো এটি। আপনার ফেসবুক একাউন্টের পাসওয়ার্ড কেউ জেনে গেলেও লগইন করতে পারবেনা মেসেজ কোড ছাড়া। এর জন্য আপনাকে প্রথমে সেটিংশে গিয়ে টু ফ্যাক্টর ভেরিফিকেশনটা চালু করে দিতে হবে এরপরে আপনি আপনার নিজের এক্টিভ নাম্বারটি দিয়ে টু স্টেপ ভেরিফিকেশন অন করা সম্পুর্ন করবেন।

আপনি যখন কোনো নতুন ডিভাইসে বা নতুন কোনো ব্রাউজার বা এ্যাপে লগইন করতে যাবেন তখনই আপনি পাসওয়ার্ড ও ইমেইল / মোবাইল নম্বর দিয়ে এন্টার করার পরে আপনাকে বলবে টু ফ্যাক্টরের অটিপি কোডটা দিতে এরপরে লগইন সম্পুর্ন হবে।
আপনার পাসওয়ার্ড কেউ পেয়ে গেলেও লগইন করতে চেষ্টা করলেই আপনার কাছে এসএমএস আসবে তাহলেই বুঝবেন আপনার একাউন্টের পাসওয়ার্ড প্রযন্ত কেউ পৌঁছে গিয়েছে তখনই পাসওয়ার্ড চেন্জ করে দিবেন।

২। শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুনঃ
আমাদের ফেসবুক একাউন্ট শুধুমাত্র সহজ পাসওয়ার্ড ব্যাবহার করার ফলে হ্যাক হয়ে যায়, এটি শুধু আমার কথা নয় অনেক ফেসবুক এক্সপার্টদের কথা। আমরা অনেকেই যে ফোন নম্বরটি দিয়ে ফেসবুক একাউন্ট খুলে থাকি সেই ফোন নাম্বারের প্রথমের ৬ সংখ্যা বা ৮ সংখ্যা বসিয়ে সেভ করে দেই। অনেকেই আবার ফেসবুক আইডি নাম যদি Md Ridoy হয় তাহলে পাসওয়ার্ড সেট করে Mdridoy123 এইভাবে, এগুলো কখনোই করবেননা।
আপনার ফেসবুক একাউন্টের পাসওয়ার্ড সবসময় শক্তিশালী পাসওয়ার্ড রাখবেন।

শক্তিশালী পাসওয়ার্ড হলোঃ যে পাসওয়ার্ড খুব সহজেই যে কেউ অনুমান বা আন্দাজ করতে পারবেনা এমন পাসওয়ার্ড কে ই বলা হয় শক্তিশালী পাসওয়ার্ড। শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলে আপনার পাসওয়ার্ডের নিকট কোনো হ্যাকারই অল্পতে পৌছতে পারবেনা, আপনার একটি ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক করার জন্য কোনো হ্যাকার দিনকে দিন বা মাস লেগে থাকবেনা; সে কয়েক মিনিট বা ঘন্টা চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিবে। শক্তিশালী পাসওয়ার্ডের উদাহরণঃ mDridoY816)?/@&%”! একইরকমের কঠিন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।

৩। থার্ড পার্টি এ্যাপ বা সফটওয়্যার ব্যবহারের পূর্বে সতর্ক থাকুনঃ আমরা অনেক সময় নিজেরাই নিজের বিপদ ডেকে আনি এ বলার কারন হলো আমাদের ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার পেছনে আমরাই হ্যাকারকে না জেনে সাহায্য করি কি বিশ্বাস হচ্ছেনা। আমরা বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে আমাদের ফোনে এ্যাপ ডাউনলোড করে সেটি ইন্সটল করে থাকি এবং ইনস্টল করার সময় ভালোকরে পড়ি ও না যে কি কি পারমিশন চাচ্ছে এ্যাপটিতে না পড়েই সব এলাউ করে দেই।

এ্যাপটি যে নিরাপদ ব্যবহারের জন্য তা কি আমরা খোজ করেছি? না করি নি সোজা মনগড়া ডাউনলোড করেই ইন্সটল এবং সব পারমিশন দিয়ে দেই। ওই এ্যাপটির মধ্যে হ্যাকারের কোনো হিডেন কি লগার থাকলে অটোমেটিক আমাদের ফোন বা কম্পিউটারের সমস্ত একাউন্ট গুলোর ইউজার, নেম পাসওয়ার্ড, মেসেজ, ফোনের সকল ডাটা পাঠাতে থাকবে।

তাই থার্টপার্টি কোনো ওয়াবসাইট থেকে ফোনের জন্য হোক বা কম্পিউটারের জন্য কোনো এ্যাপ বা সফটওয়্যার ডাউনলোড করবেননা। যদি একান্ত করারই প্রয়োজন হয় তাহলে ভালোভাবে এ্যাপ বা সফটওয়্যারটিকে স্ক্যান করুন এবং অন্যান্য ব্যবহারকারীদের থেকে জেনে নিন এটির সম্পর্কে যে কোনো ক্ষতি করে কিনা। এবং ইনস্টল করার সময়ে ভালো করে ট্রামস এন্ড কন্ডিশন ও পারমিশন পড়ে নিবেন।

৪। সন্দেহজনক লিংকে ক্লিক করবেন নাঃ
আপনার কোনো ফেসবুক ফ্রেন্ডস বা যে কেউ যদি আপনাকে মেসেজে কোনো লিংক পাঠায় তাহলে সেই লিংকটির ডোমেইন নামটি ভালোভাবে লক্ষ্য করুন, সাধারণত যে ওয়েবসাইট গুলো নিরাপদ সেগুলোর ডোমেইন নাম বা ইউআরএল দেখলেই বুঝতে পারবেন। কিন্তু যদি ডোমেইন নামটি বিধঘুটে হয় তাহলে বুঝবেন এটি কোনো ফিসিং জাতীয় সাইট যা আপনার একাউন্টের তথ্য চুরি করার সম্ভাবনা রয়েছে। সন্দেহভাজন কোনো লিংকে ক্লিক করবেননা।

৫। অপরিচিত লগইন যাচাই করুনঃ
ফেসবুক একাউন্ট নিরাপদ রাখার জন্য এই টিপসটিও প্রয়োজনীয়। আমরা অনেকেই এ কাজটি করতে অভ্যাস্ত নই, আমাদের ফেসবুক একাউন্টে প্রবেশ করার পরে সেটিংশে গিয়ে লগইন ডিটেলস দেখতে পাওয়া যায়। আপনি প্রতিদিন চেক করতে না পারলেও সপ্তাহে ১ বার কমপক্ষে চেক করবেন যে আপনার একাউন্ট টি কোন কোন ডিভাইসে লগইন রয়েছে, যদি সন্দেহজনক কোনো ডিভাইস বা এরিয়া থেকে লগইন করা হয়েছে দেখেন তাহলে সেটি লগআউট করে আপনার একাউন্টের নতুন পাসওয়ার্ড সেট করুন।

স্কাকামারদের ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে আইডি নষ্ট হওয়ার হাত থেকে একাউন্ট টিকে বাচানোর জন্যে যা যা করবেন তা হলোঃ

১। সঠিক তথ্য দিয়ে একাউন্ট খুলুনঃ
আপনার ফেসবুক একাউন্ট টি খোলার সময় ভোটার আইডি কার্ডের সাথে হুবাহুব মিল রেখে নাম, জন্ম তারিখ দিয়ে একাউন্ট খুলুন। যদি অলরেডি আপনি একটি একাউন্ট ব্যবহার করেন তাহলে সেটিকেও সঠিক তথ্যে দিয়ে পরিবর্তন করে সেভ করে নিতে পারেন।

২। প্রোফাইল পিকচারঃ

ফেসবুক একাউন্টের প্রোফাইলে নিজের ছবি ব্যবহার করুন। কেউ যদি আপনার একাউন্ট বন্ধ করে দেয় রিপোর্ট করে তাহলে আপনি ব্যাক আনার জন্য নিজের ফটো দিতে হবে কিন্তু আর নিজের ছবিটি ফেসবুক আইডির প্রোফাইল পিকচারের সাথে হুবাহুব মিল না থাকলে কিন্তু একাউন্ট টি ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকবে।

৩। ফোন নম্বর ও ইমেল যুক্ত করুনঃ
আপনার ফেসবুক আইডির সাথে ইমেইল ও ফোন নম্বরটি যুক্ত করে ভেরিফাই করে নিন।

এই ৩ টি কাজ সম্পুর্ন করা থাকলে আপনি নিশ্চিত থাকুন , আপনার একাউন্ট যতই রিপোর্ট করুক না কেন কোনো ক্ষতি করতে পারবেনা। মানে ১ বার রিপোর্ট দিয়ে বন্ধ করার পরে আপনি আপনার নিজের তথ্য দিয়ে সাবমিট করার পরেই ব্যাক পেয়ে যাবেন, এরপরে আর রিপোর্টে কোনো ক্ষতি হবেনা।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন